জনগণের জানমাল ও সম্পদের হেফাজতকারী পুলিশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষক ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকার জন্য প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্যকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
তাই পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বা পুলিশি হয়রানির পর করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’ অনুসারে ঘটনা সংশ্লিষ্ট যে কেউ অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে ‘অভিযোগকারী’ হতে পারেন অভিযোগ উত্থাপনকারী বা ভুক্তভোগী উভয়ে।
‘ক্ষতিগ্রস্ত অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ অর্থ ওই ব্যক্তি যাকে এই আইনের অধীনে তার উপর অথবা তার সংশ্লিষ্ট বা উদ্বিগ্ন এমন কারো উপর নির্যাতন করা হয়েছে।
এছাড়াও কোনো ব্যক্তিকে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্যাতন করেছে বা করছে এরকম কোনো তথ্য তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আদালতকে অবহিত করলে আদালত অভিযোগকারীর বিবৃতির ওপর নিজের মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে উক্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধান করবেন।
আইনত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে: আইন অনুসারে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’ অর্থ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ভিডিপি ও কোস্টগার্ডসহ দেশে আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী সরকারি কোনো সংস্থা অর্থাৎ ‘সশস্ত্র বাহিনী’ (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী অথবা অপর কোনো রাষ্ট্রীয় ইউনিট) যা বাংলাদেশ প্রতিরক্ষার জন্য গঠিত।
কার কাছে অভিযোগ দাখিল করবেন: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি দায়রা জজ আদালতে অথবা পুলিশ সুপারের নিচে পদস্থ নয় এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছে নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। অভিযোগ দাখিলের পর পুলিশ সুপার অথবা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়রা জজ আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। অভিযোগ দাখিলের পর থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় উপযুক্ত কারণ দেখা দিয়ে অতিরিক্ত আরো ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই মামলা শেষ করার বিধান রয়েছে।
নির্যাতনের বিবরণ: জোরপূর্বক ঘটনার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অপর কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য অথবা স্বীকারোক্তি আদায়ে কোনো ব্যক্তি অথবা তার মাধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো, বৈষম্যের ভিত্তিতে কারো প্ররোচনা বা উস্কানি, কারো সম্মতিক্রমে অথবা নিজ ক্ষমতাবলে কোনো সরকারি কর্মকর্তা অথবা সরকারি ক্ষমতাবলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকারী ব্যক্তির এসকল কাজকে ‘নির্যাতন’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
‘হেফাজতে মৃত্যু’ বলতে আইনে যা বুঝায়: ‘হেফাজতে মৃত্যু’ বলতে সরকারি কোনো কর্মকর্তার হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু; এছাড়াও হেফাজতে মৃত্যু বলতে অবৈধ আটকাদেশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক গ্রেপ্তারকালে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুকেও বুঝাবে; কোনো মামলায় সাক্ষী হোক বা না হোক জিজ্ঞাসাবাদকালে মৃত্যুও হেফাজতে মৃত্যুর অন্তর্ভুক্ত হবে।
অভিযোগ দাখিলের পর আদালতের করণীয়: নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর এখতিয়ারাধীন কোনো আদালতের সামনে কোনো ব্যক্তি যদি অভিযোগ করে যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, তাহলে উক্ত আদালত তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করবেন; একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা অবিলম্বে তার দেহ পরীক্ষার আদেশ দেবেন; অভিযোগকারী মহিলা হলে রেজিস্টার্ড মহিলা চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করবেন।
0 comments:
Post a Comment